আপনি আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এই পর্যায়কে আরও কার্যকরী এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারেন।
কিভাবে পরিকল্পনা করবেন।
1. সুস্থ থাকুন।
সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য ভালো স্বাস্থ্য আয়ত্ত করা এবং বজায় রাখা হল সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। সুস্বাস্থ্যের লাভ করার উপায় হল খুব সহজ। প্রথমে একজন চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন যিনি আপনাকে গর্ভাবস্থার বিকাশের সমস্ত পর্যায়ে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন। তার পাশাপাশি আপনি নিজে থেকে অন্যান্য অনেক উপায় গ্রহণ করতে পারেন। উদাহরন স্বরূপঃ
স্বাস্থ্যকর ওজন লাভ করুন। সঠিক ওজন স্থূলত্ব থেকে আসা জটিলতার ঝুঁকিগুলি কমিয়ে দিতে পারে।
রোগের ইতিহাস। আপনার নিজের, আপনার সঙ্গীর, এবং দুই পরিবারের স্বাস্থ্যের ইতিহাসগুলি নথিভুক্ত করুন। যদি আপনি এমন কিছু খুঁজে পেয়ে থাকেন যা নিয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন।
স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি এড়িয়ে চলুন। আপনি যদি কোন বর্তমান অথবা সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের সমস্যা খুঁজে পান, তৎক্ষণাৎ আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন ।
2. আপনার খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন।
গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে ‘আপনি যা খান আপনি তাই’ এই ভাবনাটি কিছু অংশে সত্যি। আপনি এবং আপনার সন্তান উভয়ের সর্বার্থ বিকাশের জন্যই সঠিক পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থা চলাকালীন, যখন আপনার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়, একটি সুষম খাবার আপনার সাথে সাথে আপনার সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থা চলাকালীন পুষ্টির অভাব আপনাকে বিভিন্ন ঝুঁকি এবং জটিলতার মুখে ফেলে দিতে পারে।
এই মাপ সংশোধন করার জন্য আপনি যেসব পদক্ষেপ নিতে পারেন সেগুলি হলঃ
যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিঃ একজন ভালো পুষ্টিবিদ/ চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন আপনার জন্য একটি পুষ্টিকর এবং সুষম খাবারের তালিকা ঠিক করে দেওয়ার জন্য। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফোলিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন যেমন এ, ই, সি এবং বি-শ্রেনীর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে কারন এগুলি গর্ভাবস্থায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সহায়ক খাদ্যঃ আপনার চিকিৎসক হয়তো আপনাকে জন্ম- পূর্ববর্তী ফোলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং বি- শ্রেনীর ভিটামিনের সহায়ক খাবারের পরামর্শ দিতে পারেন। চেষ্টা করুন নিয়মিতভাবে সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে এই সহায়ক খাবার গ্রহণ করতে।
তরল গ্রহণঃ গর্ভাবস্থা চলাকালীন সঠিক পরিমাণে তরল গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারন এটি হজম, পুষ্টির পরিবহন এবং বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও, যথেষ্ট পরিমাণে তরল পান করলে জলশূন্যতা এবং সেই সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলি প্রতিরোধ করে।
অতিরিক্ত নুন ও চিনি এড়িয়ে চলুনঃ অতিরিক্ত পরিমাণে নুন অথবা চিনি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এটি আপনাকে গর্ভাবস্থার মধুমেহ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি প্রদান করতে পারে।
আপনার ক্যাফেইন গ্রহণ কমানঃ ক্যাফেইন হল মূত্রবর্ধক এবং তা আপনার শরীরকে জলশূন্য করে দেয়। অধিক স্বাস্থ্যকর বিকল্প যেমন গ্রিন টি বেছে নিন যা আপনাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সুবিধাগুলি দেবে।
সংযত থাকুনঃ সম্পূর্ণভাবে অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন কারন এটি আপনার শরীরকে প্রভাবিত করে এবং এটি এমনকি আপনার ভ্রূণকেও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। এর ফলে, আপনার সন্তানের হয়তো জন্মগত ত্রুটি অথবা শিখনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে।
ফাইবার গ্রহণ বাড়িয়ে তুলুনঃ গর্ভাবস্থা থেকে হওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য কম করতে ধীরে ধীরে এবং নিয়মিতভাবে আপনার ফাইবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলুন।
3. পরিচ্ছন্নতা।
আপনার ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নজরে রাখা, আপনার চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী কারন তা সংক্রমণ এবং অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে পারে।
দাঁতের পরিচ্ছন্নতাঃ দাঁতের যত্ন অত্যন্ত প্রয়োজন। সবথেকে আগে দাঁতের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ। এতে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে যদি প্রয়োজন হয় দাঁত তোলা অথবা ক্ষয়ে যাওয়া দাঁত আরামদায়কভাবে সিল করতে সুবিধা হবে, যা এই সমস্ত কাজগুলি করার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।
স্নান করাঃ আপনার প্রতিদিন স্নান করা উচিৎ কিন্তু স্নানাগারে ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার কারনে পা পিছলে পড়ে যাওয়া থেকে সাবধানে থাকবেন।
খাবারের স্বাস্থ্যবিধিঃ এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আপনার খাবার সঠিকভাবে নির্বাচন করা। সবসময় পরিশোধিত পণ্য নির্বাচন করুন। এছাড়াও নরম চিজের মত পণ্য এড়িয়ে চলুন। শুধুমাত্র তখনই বের করা অথবা পরিশোধিত ফলের রস খান। যদি আপনার স্যালাড অথবা অঙ্কুরিত ছোলা খেতে ইচ্ছে করে, সেগুলি বাড়িতে তাজাভাবে বানান। রাস্তার ধারের খাবার এড়িয়ে চলুন কারন এগুলি থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিবেশগত জটিলতাগুলি থেকে দূরে থাকুন। যেমন উদাহরণ, কড়া-গন্ধের পরিষ্কার করার দ্রব্য, মলম, কীটনাশক, এবং রং অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। যদি আপনি এমন অবস্থায় থাকেন যেখানে এইগুলি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না, রাবারের দস্তানা পড়ুন এবং নিশ্চিত করুন আপনার ঘরে সঠিকভাবে হাওয়া চলাচল করে।
অভিভাবক হবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশের পর্যায়গুলি সম্পর্কে আপনি কতটা বুঝতে পারছেন তার প্রভাব আপনার অভিভাবকত্বে পড়ে। তাই, গর্ভাবস্থা চলাকালীন স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি জানুন এবং সেগুলি আপনার সঙ্গী এবং আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন। আপনি শিশুর বিকাশ, শিশুর জন্ম এবং অভিভাবকত্ব বিষয়ে প্রসব পূর্ববর্তী ক্লাসেও উপস্থিত থাকতে পারেন।
4. দুশ্চিন্তা কমান।
একজন গর্ভবতী মায়ের দুশ্চিন্তা এবং ভাবনা থেকে দুরে থাকা অত্যন্ত জরুরী। দুশ্চিন্তা আপনার গর্ভাবস্থায় হাইপারটেনশন অথবা যোনি থেকে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে যা আপনি এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে।
কিভাবে দুশ্চিন্তা এড়ানো যায়?
এমন অভ্যাস এবং কাজ এড়িয়ে চলুন যা আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কিছু ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব থাকে, তাদের এই সময়ে এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও, যদি শারীরিক কসরত অথবা রান্না করায় আপনি স্বচ্ছন্দ না হন, এগুলি করা থেকে এখন বিরত থাকুন।
আরাম করার প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহারকরুন। কয়েকটি আরাম করার প্রক্রিয়া জানার জন্য আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
হালকা শারীরিক কসরত দুশ্চিন্তা কম করার ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। হাঁটতে যান। কিছু হালকা কসরত করুন। যদিও, আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন অথবা একজন পেশাদার প্রশিক্ষকের অধীনে কসরত করুন।
ইতিবাচক মনোভাব আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। এমন কিছু কাজের সাথে যুক্ত থাকুন যা আপনার চারপাশে এবং আপনার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, এই সময়টি আপনার শখগুলি পূরণ করার জন্য সবথেকে ভালো।
যোগাযোগ রাখুন। আপনার সঙ্গী এবং অন্যান্য কাছের প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখলে তা আপনার শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণে দুশ্চিন্তা নির্মূল করতে সাহায্য করে।
বিশ্রাম এবং ঘুমঃ আপনাকে অবশ্যই 10 ঘণ্টা ঘুমোতে হবে (2 ঘণ্টা দিনে এবং 8 ঘণ্টা রাতে)
5. শারীরিক কসরত।
কসরতের একাধিক সুফল রয়েছে। সঠিক নির্দেশনায় হালকা কসরত করলে শুধুমাত্র যে সঠিক ওজন ধরে রাখতে সুবিধা হয় তা নয় বরং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে, কোষ্ঠকাঠিন্য, পিঠে ব্যাথার মত অস্বস্তি কমায়, এবং হজম ও রক্ত সরবরাহ উন্নত করে।
কি ধরনের কসরত?
সঠিক শ্রোণিপথের কসরত আপনার শ্রোণির পেশী এবং সন্ধি শক্ত করে এবং বেড়ে ওঠা জরায়ুকে সঠিক সহায়তা প্রদান করে। কসরত করলে সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া আরও মসৃণ হয়। আপনার চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন এবং একজন পেশাদার প্রশিক্ষকের অধীনে কসরত করুন।
6. জীবনযাত্রার কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন করুন। যদি আপনি ধূমপান করেন, এটিই হল তা ছেড়ে দেবার সময়। তার কারন ধূমপান শুধুমাত্র আপনার ফুসফুসের ক্ষতি করে না তা আপনার বাড়ন্ত ভ্রূণেরও ক্ষতি করে। এমনকি পরোক্ষ ধূমপানও ক্ষতিকর হতে পারে। ধূমপান বিহীন পরিবেশে থাকুন, মদ্যপান বর্জন করুন এবং দুশ্চিন্তামুক্ত চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত হন।
সংক্ষেপে, স্বাস্থ্যই সম্পদ। এই চিরাচরিত কথা হয়তো শুনতে পুরনো লাগতে পারে, কিন্তু এটি সবসময়েই সত্যি। এবং সুখবরটি হল, এটি যথেষ্ট সহজ
English | Tamil | Hindi | Telugu | Bengali | Marathi |
0 reviews