স্নানের সময়ের জন্য দশটি পরামর্শ
1. কত ঘন ঘন? এই মাত্রা আপনি কোন আবহাওয়ায় বাস করেন, আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য, বয়স, এবং বছরের কোন সময় চলছে তার ওপর নির্ভর করে। প্রথম দিকের সপ্তাহগুলিতে আপনার বাচ্চা প্রতিদিন স্নান করতে নাও চাইতে পারে- এর বিকল্প হল মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্পঞ্জ করে দেওয়া। প্রতিদিন স্নান আরও বেশি জরুরী যখন আপনার বাচ্চা দৈনন্দিন জিনিস উপভোগ করবে এবং কঠিন খাবার খেতে শুরু করবে।
2. প্রস্তুত থাকুনঃ স্নানের সময় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি যেমন স্নানের সাবান, তোয়ালে, মোছার কাপড়, নতুন ন্যাপি এবং কাপড় অন্যান্য পরিষ্কার করার কাপড় এক জায়গায় রাখুন। স্নানের সময় শুরু করার আগে সেগুলি হাতের কাছে রাখুন।
3. জলের উষ্ণতাঃ আপনার বাচ্চা আপনার মত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই বাস্পবিহীন উষ্ণ ঘরে স্নানের ব্যবস্থা করা জরুরী। জলকে শরীরের উষ্ণতায় নিয়ে আসুন- আপনার বাচ্চাকে জলে ডোবানোর আগে আপনার কনুই ডুবিয়ে জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিন। আপনার কনুই রংহীন বা গরম অথবা ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়া চলবে না।
4. প্রথমে মুখ, চোখ এবং কানঃ তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে জামা পড়ানোর মাদুরে রাখার পর, প্রথমে আপনার বাচ্চার চোখ, কান এবং মুখ পরিষ্কার করুন।
5. ভালো করে ধরুনঃ ভেজা অবস্থায় আপনার বাচ্চা পেছল থাকবে। স্নান করানোর সময় এবং ওঠানোর সময় আপনার বাচ্চাকে দুই হাত দিয়ে ধরুন। আপনার বাচ্চাকে জলে পিছলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে, নীচে একটি তোয়ালে পেতে রাখুন যা স্নানঘরের নরম ম্যাট হিসেবে কাজ করবে। আপনার বাচ্চা স্নানের জলে থাকার সময় কখনোই তাকে ছেড়ে দেবেন না।
6. কম ক্ষারীয় সাবান নির্বাচন করুনঃ আপনার বাচ্চার ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল- আপনার বাচ্চার ত্বকে ব্যবহার করা দ্রব্যগুলির অবশ্যই প্রাকৃতিক এবং মৃদু হওয়া প্রয়োজন। ত্বক শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে আপনি জলে স্নানের তেল (গন্ধমুক্ত)মিশাতে পারেন। বাচ্চাদের সাবান এবং শ্যাম্পুর প্রয়োজন হয় না, আপনি শুধুমাত্র জল ব্যবহার করতে পারেন। একবার আপনার বাচ্চা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে, আপনি হয়তো ইচ্ছে হলে সপ্তাহে 1-2 বার গন্ধবিহীন, প্রাকৃতিক স্নানের সাবান, তেল, ময়েশ্চারাইজার এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
7. চুলের যত্নঃ আপনার বাচ্চার কয়েকমাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত অথবা চুল গজানোর আগে, শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই। আপনার বাচ্চার মাথা পেছনের দিকে ঝুকিয়ে রাখুন যাতে তার চোখে ফেনা গড়িয়ে না পড়ে এবং মৃদু, প্রাকৃতিক বাচ্চাদের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
8. শৈশবের টুপির যত্নঃ প্রথম কয়েক মাসের জন্য, আপনি হয়তো আপনার বাচ্চার মাথার তালুতে ছোট ছোট চামড়া অথবা আর্দ্র খোলসের মত টুকরো লক্ষ্য করতে পারেন- একে বলা হয় শৈশবের টুপি। ভালো মত তোয়ালে দিয়ে মুছে মাথা শুকনোর পর নিয়মিত চুল ব্রাশ করে ও আঁচরে এই চামড়াগুলিকে নির্মূল করুন।
9. শুকনো করুনঃ যখন স্নান করা হয়ে যাবে, আপনার বাচ্চাকে একটি পরিষ্কার নরম তোয়ালেতে জড়িয়ে নিন এবং হালকা ভাবে চাপড় মেরে তাকে শুকিয়ে নিন জোরে ঘষবেন না। আপনার পরিষ্কার, নিশ্চিন্ত বাচ্চার অতুলনীয় তরতাজা গন্ধ এবং সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
10. স্নানের সময়কে বিশেষ করে তুলুনঃ ভালো স্বাস্থ্যবিধির জন্য স্নান করা জরুরী কিন্তু তা আপনি এবং আপনার সন্তানের মধ্যে নিকট বন্ধন গড়ে তোলার জন্যও একটি বিশেষ সময়। হাসুন, আরাম করুন এবং তাদের সাথে এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করুন।
নাভির কাটা অংশের যত্ন
আপনার বাচ্চার জন্মের পরে প্রথম 24-48 ঘণ্টার জন্য নাভির কাটা অংশটি আটকে রাখা থাকবে।
নাভির কাটা অংশের কোষের চেহারার পরিবর্তন ঘটে (শুকনো এবং গাঢ় রং) এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এর একটি গন্ধ থাকে।
নাভির ফুলটি ছিঁড়ে যাওয়ার আগে একটি বাজে গন্ধ হতে পারে এবং তা প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে যেকোন সময়ে হতে পারে। নাভির কাটা অংশের মুখটির যত্নের জন্য নিম্নলিখিতগুলি উপলব্ধ রয়েছেঃ
- তুলো লাগানো অ্যাপ্লিকেটর
- তুলোর বল অথবা গজ
- সামুদ্রিক লবণ মেশানো পরিষ্কার জল অথবা সাধারণ স্যালাইন তরল
নাড়ির যত্নের আগে এবং পরে হাত ধোয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
যখনই মূত্র অথবা মলের সংস্পর্শে এসে নাড়ির অংশটি ময়লা হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। সম্পূর্ণ সেরে ওঠা না পর্যন্ত নাভির কাটা অংশ নজরে রাখুন এবং পরিষ্কার করুন। যদি এর আশেপাশের ত্বকে কোন প্রদাহ দেখা যায় সাধারণ স্যালাইন দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধক ক্রিম লাগান।
নাভির ফুলটি পড়ে যাওয়ার পড়ে নাভির অংশে কোন রংহীন তরলের ক্ষরণ অথবা মোচন ঘটলে, সাধারণ স্যালাইন তরল অথবা ঠাণ্ডা করা ফোটান জল দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং শুকনো রাখুন।
শুকিয়ে যাওয়া নাভির ফুলটি পড়ে যাওয়ার পরে সেই অংশটি থেকে ক্রমাগত ক্ষরণ অথবা রক্তপাত হলে পেশাদারদের পরামর্শ নিন এবং হাওয়া চলাচলের মাধ্যমে জায়গাটি শুকিয়ে নেওয়া চালিয়ে যান।
বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করা
বেশ কয়েকটি তুলোর বল অথবা নরম কাপড় ব্যবহার করে আপনার বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করুন। সেগুলিকে তৈরি করা স্নানের জলে ভিজিয়ে নিন।
নাকের অংশ থেকে বাইরের দিকে চোখের অংশ দৃঢ় অথচ নরমভাবে মুছে নিন। আরেকটি ভেজা তুলোর বল ব্যবহার করে অপর চোখটি পরিষ্কার করুন।
কখনো-কখনো কান্নার ফলে চোখ চিটচিটে হয়ে যায় এবং একসাথে আটকে যায়, তা আরও বেশিবার পরিষ্কার করা প্রয়োজন এবং শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়। এগুলি সাধারণত বন্ধ হয়ে যাওয়া অশ্রু গ্রন্থির কারনে হয়। নিয়মিত পরিষ্কার করার পরেও বেশ কয়েক সপ্তাহের জন্য এমনকি কয়েক মাসের জন্যও চোখগুলি আঠালো থেকে যেতে পারে। যদি ক্ষরণে কোন পরিবর্তন দেখা যায় অথবা চোখ লাল হয়ে যায় বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন গ্রহণ করুন।
বাচ্চার কান পরিষ্কার করা
আপনার বাচ্চার কানের বাইরের অংশে কান থেকে মো্মের মত পদার্থ জমা হয় এবং চোয়াল নাড়ার সাথে সাথে তা কানের বাইরের দিকে চলে আসে। এর উদ্দেশ্য হল প্রাকৃতিকভাবে কান পরিষ্কার করা এবং নরম রাখা এবং ধুলো ও ময়লা থেকে কানকে রক্ষা করা যখন সেগুলি ভেতরে ঢোকে। যদি অন্তঃকর্ণের নালিতে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে মো্মের মত পদার্থ উৎপন্ন হয় তাহলে শোনার সমস্যা হতে পারে।
আপনার বাচ্চার কানের বাইরের অংশের ভাঁজ এবং কানের পেছনে শুধুমাত্র ভেজা তুলোর বল অথবা নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। কখনোই কানের নালির ভেতরে তুলো লাগানো কাঠি অথবা কোন সরু বস্তু ঢোকাবেন না- এতে আপনি কানের পর্দায় ছিদ্র করে ফেলতে পারেন।
হাতের নখের যত্ন
আপনি লক্ষ্য করবেন আপনার বাচ্চার হাতে খুব নরম কিন্তু খুব বড় নখ রয়েছে যা খুব দ্রুত বেড়ে যায়।
এগুলি কখনোই দাঁতে কামড়ে অথবা টেনে তোলা উচিৎ নয় তাতে নখের আবরণের ক্ষতি হতে পারে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় কারন এতে খোলা ক্ষতের সৃষ্টি হবে। এর বদলে, হয় বাচ্চাদের নখ কাটার যন্ত্র অথবা বাচ্চাদের জন্য ভোঁতা কাঁচি ব্যবহার করুন।
এতে বেশিরভাগ সময়ে দুইজন মানুষকে কাজ করতে হয়। একটি ভালো সময় হল যখন আপনার বাচ্চা খায় অথবা অন্য কারো কোলে বিশ্রাম করে।
নখের আগা থেকে সোজা করে কাটুন, নখের জমি থেকে নীচের দিকে নয়।
হাতগুলি মোজা, কাপড় অথবা কোন পোশাকের হাতা দিয়ে জড়িয়ে নিলে তা আঁচড় লেগে কেটে যাওয়া প্রতিরোধ করবে।
পায়ের নখের যত্ন
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে আপনার বাচ্চার পায়ের নখ সামান্য বাঁকাভাবে বেড়ে উঠেছে এবং এগুলি বেশিরভাগ সময়ে আঙুলের ভেতরে বেড়ে ওঠা পায়ের নখের মত দেখতে লাগে? এগুলি নরম এবং ক্ষতি করবে না কিন্তু এগুলি উৎপাটিত হতে পারে অথবা ক্রমাগত মোজা, বুটি অথবা জামার ভেতরে পা ঢুকিয়ে রাখার কারনে প্রদাহ হতে পারে।
আপনার সন্তানের পায়ে কিছু সময় ধরে যাতে বাতাস লাগে তা নিশ্চিত করুন। একটি উপযুক্ত ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী লোশন যেমন টি ট্রি তেল লাল প্রদাহযুক্ত জায়গায় আলতো করে লাগান।
আপনার বাচ্চার পা খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। নজরে রাখুন সেগুলি যেন ছোট এমন মোজা অথবা জামার মধ্যে যেন আটকে না থাকে।
নাক পরিষ্কার করা এবং হাঁচি
আপনার বাচ্চার নাকের পথ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরী। আপনার বাচ্চা নাক ঝাড়তে অথবা সঠিকভাবে কাশতে পারে না তাই এই বায়ু চলাচলের পথ পরিষ্কার রাখার জন্য প্রায়ই নিয়মিতভাবে হাঁচি দেয়। নাকের ক্ষরণ আর্দ্র রাখলে তা সেগুলি সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। আপনি এটি আয়ত্ত করতে পারেন নিয়মিত খাওয়ানো এবং সামান্য জল অথবা সাধারণ স্যালাইন নাকে ছিটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। শুকনো আবহাওয়ায় অথবা উষ্ণ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘুমনোর জায়গায় আর্দ্র রাখার যন্ত্র কার্যকরী হয়। যখন নাকের ক্ষরণ আর্দ্র থাকে, ওষুধের দোকান থেকে কেনা ছোট রবারের বাল্ব ব্যবহার করুন অথবা একটি টিস্যুর কোণাটি মুড়িয়ে নিন এবং নাকের নিচ থেকে হালকাভাবে কোন বস্তু থাকলে তা পরিষ্কার করে নিন। কখনো তুলোর বাড (অথবা এই কারনে অন্য কিছু) নাকের ভেতরে ব্যবহার করবেন না।
English | Tamil | Hindi | Telugu | Bengali | Marathi |
0 reviews